আলোর নিউজ https://www.alornews.com/2022/04/blog-post_56.html

ইয়াহু উত্থান ও পতন দেখে নিন

 ইয়াহু এর কথা শুনেনি এমন হয়তো কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ একসময় ইন্টারনেটের দুনিয়ায় ইয়াহু এর রাজত্ব ছিল। অনেকেই গুগলের পাশে ইয়াহুকে রাখতে চান। বর্তমানে ইন্টারনেটের দুনিয়ায় ১৫০ টিরও বেশি সার্চ ইঞ্জিন থাকলেও আমরা সবাই গুগল কে চিনি। ঠিক তেমনি ইয়াহু ও ছিল সকলের কাছে পরিচিত এবং জনপ্রিয়। 


এখন হয়তো ভাবছেন, তাহলে এখন কেন ইয়াহু এত পিছিয়ে? আজকের পোষ্টে আমরা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। আজকের পোস্টটি পড়ার পর আপনারা ইয়াহু উত্থান ও পতন সম্পর্কে জানতে পারবেন। হঠাৎ ইয়াহু হারিয়ে যাওয়ায় আপনারা অনেকেই ইয়াহু উত্থান ও পতন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী।



পোস্ট সূচিপত্র: ইয়াহু উত্থান ও পতন।

ইয়াহু: ইয়াহু উত্থান ও পতন।

ইয়াহু এর যাত্রা শুরু হয় 1994 সাল থেকে। এটি ছিল একটি পাবলিক কোম্পানি। এটি 2005 সালে বিশ্বের অন্যতম ওয়েবসাইট ছিল। এই কোম্পানির সদর দপ্তর ছিল সানভেল, ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এটি ছিল বিশ্বের প্রথম ডোমেইন কোম্পানি। এটি কম্পিউটারের সফটওয়্যার নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করত। 2015 সাল পর্যন্ত এর কর্মীসংখ্যা ছিল 11400 জন। ইয়াহু এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট হল ইয়াহু.কম

2011 সালে এটি এটা ইন্টারনেট জগতে শীর্ষস্থান দখল করেছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে গুগল ইয়াহু এর জায়গা দখল করতে লাগলো। অবশেষে মার্কিন টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি ভেরাইজনের কাছে 2016 সালের জুলাই মাসে 4.48 মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়ে যায়। যা একেবারেই ইয়াহু এর মূলধন এর সমতুল্য। 
এতক্ষণ আমরা ইয়াহু সম্পর্কে জানলাম। এখন আমরা দেখব ইয়াহু উত্থান ও পতন| 

ইয়াহু- উত্থান: ইয়াহু উত্থান ও পতন।

ভিড ফিলো এবং জেরি ইয়াং নামে দুই জন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এর হাত ধরে 1994 সালে যাত্রা শুরু হয় ইয়াহুর। তারা দুজনেই ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। কিন্তু প্রথম থেকে এই ওয়েবসাইটের নাম ইয়াহু ছিল না। প্রথমে এই ওয়েবসাইটের নাম ছিল ' David and Jerry's guide to the world wide web'। এবছরের মার্চ মাসেই এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ইয়াহু। 

নব্বইয়ের দশকের দিকে ইয়াহু জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ইয়াহুর পাবলিক অফারিং হয় 1996 সালে তখন এর মূল্য ছিল প্রায় 900 মিলিয়ন ডলার। এর পরের বছর তারা বিশ্বের সেরা কোম্পানি Alo এর পরের স্থান দখল করে নেয়। এর পরের দুই বছরে কোম্পানির স্টক মূল্য প্রায় 600 শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এরপরে তারা আরো নতুন নতুন সেবা এবং সুবিধা বাড়াতে থাকে। 1998 সালে তারা সেবার তালিকা এড করে ইমেইল, শপিং, গেমস, অনলাইন ম্যাগাজিন, ওয়েদার ইত্যাদি। এভাবেই তারা দিনদিন সফলতার দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু এই সফলতা তারা বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনি। এখন আমরা দেখব ইয়াহুর পতন কিভাবে শুরু হলো।

ইয়াহু পতন: ইয়াহু উত্থান ও পতন।

ইয়াহু নতুন নতুন সেবা আনার জন্য সফলতা দেখলেও কিছু ভুল সিদ্ধান্তের জন্য তা ধরে রাখতে পারেনি। এখন আমরা আলোচনা করব ইয়াহুর পতনের কারণ নিয়ে। 

ভুল সিদ্ধান্ত: স্ট্যানফোর্ডের দুইজন পিএইচডি শিক্ষার্থী অ্যালগরিদম বিক্রির জন্য ইয়াহুর কাছে গিয়েছিলেন 1998 সালে। তখন ইয়াহু 1 মিলিয়ন ডলার দিয়ে অ্যালগরিদম কিনতে রাজি হননি। শিক্ষার্থী দুজন ছিলেন গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ এবং সের্গেই ব্রিন। তাদের এই পেজরেঙ্ক অ্যালগোরিদমের জন্যই গুগল এত জনপ্রিয়। হয়তো তাদের এই ভুলেই গুগলকে সফলতার দ্বার খুলে দিয়েছে।

গুগল ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর যখন মূল্য দাঁড়ায় 5 মিলিয়ন ডলার। তখন ইয়াহু 1 মিলিয়ন ডলারে পেজরেঙ্ক অ্যালগরিদম কিনতে চাইলে মার্ক জুকারবার্গ রাজি হননি। 

শুধুমাত্র কেনার ক্ষেত্রে নয় বিক্রির ক্ষেত্রেও ভুল সিদ্ধান্ত নেয় ইয়াহু। মাইক্রোসফ্ট 2008 সালে 44.6 মিলিয়ন ডলারে ইয়াহু কিনতে চাইলে প্রস্তাব প্রত্যাখান করে দেয় ইয়াহু। যা পরবর্তী বিক্রির মূল্যের চেয়ে অনেক গুন বেশী ছিল। 

ভুল বিনিয়োগ: 1999 সালে নেওয়া দুটি ভুল সিদ্ধান্ত তাদেরকে আরও পেছনে ফেলে দেয়। সিদ্ধান্ত দুটি ছিল Geocities and Broadcast. Com কেনা। 

1999 সালে 3.7 মিলিয়ন ডলারে Geocities ক্রয় করে ইয়াহু। এটি ছিল তখনকার সময়ে বিশ্বের তৃতীয় ব্রাউজ করা সাইট। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা নিজের হোম পেজ তৈরি করতে পারতো। সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং নতুনত্ব না থাকায় ভিজিটর সংখ্যা কমতে থাকে। 2009 সালে বন্ধ করে দিতে হয় Geocities. 

একই বছর 5.7 বিলিয়ন ডলারে অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিস ব্রডকাস্ট ক্রয় করে ইয়াহু। ব্রডকাস্ট থেকে ভিডিও এবং অডিও পৃথকভাবে সার্ভিস চালু করে ইয়াহু। তখনকার সময়ে ইন্টারনেট কানেকশন ধীরগতি হওয়ায় ভিডিও তেমন সাড়া পায়নি। এটিতেও সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় সফলতার মুখ দেখতে পায়নি ইয়াহু। 

পরবর্তীতে 30 মিলিয়ন ডলারে ফটো শেয়ারিং সাইট Flickr ক্রয় করে ইয়াহু 2005 সালে। এটিকে তারা সোসিয়াল মিডিয়া পরিণত করতে চাইলে সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে ব্যর্থতার মুখ দেখতে হয়। 

ইয়াহুর ব্যর্থতার মুখ দেখার আরো কয়েকটি কারণ রয়েছে। দিন দিন নিত্য নতুন সফটওয়্যার আবিষ্কারও ইয়াহুর ব্যর্থতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন: মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, হটমেইল, ইমেজ, ইন্সট্রাগ্রাম এবং পিন্তেরেস্ট। নতুন সফটওয়্যার আসাতে ভিজিটর কমতে থাকে ইয়াহুর। 

ইয়াহুর এত ব্যর্থতার মুখ দেখার মূল কারণ ছিল সিইও। অর্থাৎ তাদের কোনো আদর্শ c.e.o. ছিলনা। যে তাদের সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারে। এবং তাদের কর্মীরাও ছিলেন স্বল্পশিক্ষিত নতুন নতুন আইডিয়া আবিষ্কার করতে পারেননি। তারা 2015 সাল অব্দি প্রায় 115 টি কোম্পানির সাথে কাজ করছিল। 2016 সালে হঠাৎ 4.35 মিলিয়ন ডলার লস হওয়ায় কোম্পানি বিক্রি করতে হয়েছিল একদম মূল মূল্যে। এত সফলতার পরও তাদের ভুল ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যর্থতার মুখ দেখতে হয়।

শেষ কথা: ইয়াহু উত্থান ও পতন।

আমাদের আজকের পোস্ট ইয়াহু উত্থান ও পতন। পরে নিশ্চয়ই ইয়াহু সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। ইয়াহু প্রথমদিকে জয় ধ্বনি শুনতে পেলেও মাঠ ছেড়ে যেতে হয় থাকে। তাদের কয়েকটি ভুল সিদ্ধান্তের জন্য তাদের আজ এই করুণ পরিণতি। প্রতিটি ব্যবসার সফলতা নির্ভর করে তার পরিকল্পনার উপর। আর আপনি যদি ইয়াহু সম্পর্কে আর কিছু জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন। 

অন্যদের সাথে শেয়ার করুন

0 Comments

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন ??

নটিফিকেশন ও নোটিশ এরিয়া